স্বপ্নদোষ কি? কেনো হয় এবং বাঁচার উপায়?

  আচ্ছালামু আলাইকুম, পুরোটা পরার আহ্বান রইলো। 

স্বপ্নদোষ নিয়ে অনেকের মনেঅনেক প্রশ্ন থাকে। যেমন,

  1. স্বপ্নদোষ কী কোনো রোগ নাকি..?
  2. মাসে কতবার স্বপ্নদোষ হওয়া স্বাভাবিক..? 
  3. কি কি কারণে স্বপ্নদোষের মাত্রা বেড়ে যায়..?সাধারণত কত বছর থেকে স্বপ্নদোষ শুরু হয়..?
  4. রমজান মাসে রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি  রোজা নষ্ট হয়ে যায়..? 
  5. স্বপ্নদোষ হলে গোছল ছাড়া কী নামাজ পড়া যাবে?


আজ এই সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো  ইনশাআল্লাহ 

  • না, স্বপ্নদোষ কনো রোগ নয়।  এটি একটি স্বাভাবিক শারীরিক ক্রিয়া, যা একটি ছেলের ১৩ থেকে ১৫ বছরের মাঝে শুরু হয়, এটি বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শরীর থেকে ঘুমের মধ্যে অতিরিক্ত বীর্য বের করে দেয়।

  • একটি সুস্থ স্বাভাবিক পুরুষের মাসে ৩-৪ বার স্বপ্নদোষ হওয়া স্বাভাবিক, তবে শরীরে বীর্যের তারতম্যের কারণে, আবার হস্তমৈথুন ইত্যাদি কারণে এবং বয়সের তারতম্যের কারণে এই সংখ্যার কম বেশ হতে পারে, আর মাসে ৩-৪ অথব অতিরিক্ত ৫ বারের বেশী হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

  • একজন পুরুষের স্বপ্নদোষের মাত্রা বেড়ে যায় যদি তিনি টেস্টোসটেরনসমৃদ্ধ ওষুধ গ্রহণ করেন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কিছুসংখ্যক বালক টেস্টোসটেরনের মাত্রা বাড়ানোর ফলে তাদের স্বপ্নদোষের মাত্রাও মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। ১৭ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ শতাংশে, আবার অনেক যৌন রোগের জন্যও স্বপ্নদোষ বেড়ে যায়,আবার অনেকের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে হস্তমৈথুন করে, হঠাৎ করে ছেড়ে দিলে আংশিক কিছুদিন স্বপ্নদোষের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যেতে পারে, তবে এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। 

  • রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে, রোজা নষ্ট হবেনা, কারণ এটা আপনি ইচ্ছে করে করেননি, হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, "তিনটি বস্তু রোজা ভঙ্গের কারণ নয়-০১. বমি;০২. শিঙ্গা লাগানো ও০৩. স্বপ্নদোষ।" (মুসনাদে বাযযার, মাজমাউয যাওয়ায়েদ তিরমিজি, বাইহাকি)সুতরাং রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙে যায় ভেবে পানাহার করা ঠিক নয়। বরং রোজা পালন করে তা পরিপূর্ণ করা।

  • স্বপ্নদোষ হলে গোসল করা ফরজ, অনেকে মনে করে যে স্বপ্নদোষ হলে, নাপাক কাপড় পরিবর্তন করে ওজু করে নামাজ আদায় করলে নামাজ হয়ে যায়.. আসলে এটা ভুল ধারণা, স্বপ্নদোষ হলে গোছল করা ফরজ, গোছল না করে নামাজ আদায় করা যাবেনা।


লেখায় কোনো ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, আর স্বপ্নদোষ নিয়ে আপনার মনে আরো কনো সংকোচ বা প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন, ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো সঠিক পরামর্শ দিতে, লজ্জা নয়, আসুন সচেতন হই।

সম্পূর্ন লেখাটি পরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, আপনার সময় অনেক ভালো কাটুক।


স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তি পাবার উপায় কি ?


স্বপ্নদোষ হল ঘুমের মধ্যে বীর্যপাত। এটাকে নাইট পলিউশন বা ভেজাস্বপ্ন বলে অনেকে। যে কোন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের স্বপ্নদোষ হতে পারে। অনেকের এটা সমস্যা মনে করেন আবার অনেকে এটা স্বাভাবিক মনে করেন। যাদের অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হয় তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।


স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায়ঃ


ঘুমাতে যাবার আগে প্রস্রাব করে নিন। এটি স্বপ্নদোষের চাপ কমাতে শরীরকে সাহায্য করে।


 ঘুমাতে যাবার আগে এককাপ ঋষি পাতা ‘র চা পান করলে অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।


ঋষি পাতা - প্রশ্ন ও উত্তর


অশ্বগন্ধা (Withaniasomnifera) স্বপ্নদোষে সৃষ্ট সমস্যায় উপকার করে।


অশ্বগন্ধা - প্রশ্ন ও উত্তর 

অশ্বগন্ধা


 ঘুমানোর আগে যদি সামান্য পরিমান প্রস্রাবের লক্ষনও থাকে বিছানা যাবার আগে প্রস্রাব করে নিন।


রাতের খাবার খাওয়ার পর-পরই ঘুমাতে যাবেন না। কিছুক্ষন হাটা-হাটি করুন।


প্রতিদিন সামান্য করে হলেও পুদিনা পাতা অথবা মিছরী খাবার অভ্যাস করুন।


পবিত্র কোরআনের ৩০ নাম্বার পারার “সুরা তারিক” পড়ে শয়ন করুন।হালকা জিকির এবং অন্যান্য দোয়া পড়ে ঘুমাতে গেলে আল্লাহর রহমতে স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।


আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন এবং আপনাকে সাহায্য করতে পেরেছি। আর কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানান। সাথে আছে সব সময়।


প্রশ্ন: স্বপ্নদোষ হলে তখনি গোসল করতে  হবে কী?

নাকি পরে গোসল করে নেওয়া  যাবে?


উত্তর: শরীর নাপাক হয়ে গেলে দ্রুত গোসল করে নেওয়া উত্তম।

কোন কারনে বিলম্ব হলেও তাতে কোন সমস্যা নেই। তবে এই অবস্থায় কিছু পানাহার করতে চাইলে অথবা ঘুমাতে চাইলে অজু করে নেওয়া উত্তম।


গ্রন্থঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)

হাদিস নম্বরঃ ২২৪


নাপাক ব্যক্তি অযু করবে 


‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাপাক অবস্থায় খাওয়ার অথবা ঘুমাবার ইচ্ছা করলে অযু করে নিতেন।

সহীহ : মুসলিম।


মুসলিম (অধ্যায়ঃ হায়িয, অনুঃ অপবিত্রত ব্যক্তির ঘুমানো জায়িয), নাসায়ী (অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ জুনুবী ব্যক্তি খাওয়ার ইচ্ছা করলে উযু করবে, হাঃ ২৫৫), দারিমী (অধ্যায়ঃ খাওয়া-দাওয়া, অনুঃ জুনুবী ব্যক্তির খাওয়া প্রসঙ্গে, হাঃ ২০৭৮) আহমাদ (৬/১২৬, ১৯১, ১৯২), ইবনু খুযাইমাহ (অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, হাঃ ২১৫, সকলেই শু‘বাহ থেকে উল্লিখিত সনদে। হাদিসের মানঃ সহিহ।

Previous Post Next Post